মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল শনিবার সৌদি আরবের জেদ্দায় আরব নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ওয়াশিংটনে ফিরে গেছেন। তার এ সফরকালে তিনি ইরানকে মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সম্পৃক্ততার বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত প্রতিযোগিতায় প্রভাবের কথাও তুলে ধরেছেন। খবর ভয়েস অব আমেরিকার।
উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের নেতাদের এক সমাবেশে জিসিসি+৩ শীর্ষ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, আপনাদের সবার সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে, যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে একটি ইতিবাচক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য বিনিয়োগ করেছে।
সম্মেলনে বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ছাড়াও মিশর, ইরাক ও জর্ডানের নেতারা অংশগ্রহণ করেন।
বাইডেন এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার মূল নীতিগুলো তুলে ধরেন। যার মধ্যে অংশীদারত্বকে শক্তিশালী করা এবং ‘নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা’ যারা সমর্থন করে, সেসব দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার প্রতি সহায়তা প্রদান; এবং যেসব বিদেশি ও আঞ্চলিক শক্তি সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করতে চায় এবং নৌ-চলাচলের স্বাধীনতাকে খর্ব করতে চায়, তাদের প্রতিরোধ করার বিষয়টি রয়েছে।
বাইডেন এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে ইরানের কার্যকলাপ, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের কর্মকাণ্ডকে নিয়ম-ভিত্তিক শৃঙ্খলাকে খর্ব করার প্রচেষ্টার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
বাইডেন বলেন, ওয়াশিংটন উত্তেজনা কমাতে এবং ‘যেখানে সম্ভব’ সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে কাজ করবে এবং জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত মানবাধিকার ও মূল্যবোধকে সমর্থন করবে।
বাইডেন আরও বলেন, বিধি-ভিত্তিক আদেশকে সমর্থন করার অর্থ এই নয় যে, আমাদের সবসময় প্রতিটি বিষয়ে একমত হতে হবে। কিন্তু, এর মানে হলো—আমরা মূল নীতিগুলোর চারপাশে এক কাতারে দাঁড়াই, যেন আমরা সবচেয়ে জরুরি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলেতে একসঙ্গে কাজ করতে পারি।
শীর্ষ সম্মেলনের নেতারা ইরাকের বৈদ্যুতিক গ্রিডকে কুয়েত ও সৌদি আরবের মাধ্যমে জিসিসির গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য একটি চুক্তি ঘোষণা করেছেন। এভাবে ইরানের ওপর বাগদাদের নির্ভরতা হ্রাস পাবে। তবে, নেতারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে ক্রমবর্ধমান মূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে তেলের উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ সাংবাদিকদের বলেন, এটি সত্যিই শীর্ষ সম্মেলনে আলোচনার বিষয় ছিল না। ওপেক প্লাস বাজারে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য যা প্রয়োজন বলে মনে করে, তাই করবে।
এক বিবৃতিতে মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন—আগামী মাসে পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারী দেশগুলোর ১৩ সদস্যের এবং রাশিয়াসহ অন্যান্য ১০টি তেল উৎপাদনকারী সংস্থার বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত কোনো তেল উৎপাদনের ঘোষণা প্রত্যাশিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন রাশিয়া ও তেহরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের বিষয়ে সতর্ক করেছে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, যা ইঙ্গিত করে যে, ইরান সরকার রাশিয়াকে অস্ত্র বহন-সক্ষম ইউএভিসহ কয়েকশ ড্রোন, বা ইউএভি সরবরাহ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
হোয়াইট হাউস এরই মধ্যে ‘শাহেদ-১৯১’ ও ‘শাহেদ-১২৯’ মানবহীন আকাশযানের তিনটি ছবি প্রকাশ করেছে, যা নির্ভুল-নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সক্ষম।